Jakariya1234 Subscriber 2 years ago |
বলিষ্ঠ এক যুবক। আরবের মরু এলাকায় তার বাস। মদীনা থেকে দূরে বহু দূরে অবস্থান করে সে। বিশেষ প্রয়োজনেই কেবল মদীনায় যায়। কয়েকদিন থাকে । আবার ফিরে আসে।
তখন চলছিল সিংহ পুরুষ হযরত ওমর (রা.) এর শাসনকাল । একদিন যুবকের মদীনায় যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দিল। বিশেষ প্রয়োজন । যেতেই হবে । না যেয়ে উপায় নেই ।
দিনক্ষণ ঠিক করে মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল যুবক। যেতে হবে তাকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে অনেক দূরে। সুদূর মদীনায়। সফর সঙ্গী হিসেবে একটি উট ছাড়া অন্য কেউ নেই । হাতে সময় ছিল খুবই কম । সেজন্য জরুরি বিশ্রাম ব্যতীত বাকি সময়টুকুতে বিরামহীন ভাবে চলছিল সে ।
চলার পথে ক্লান্ত দেহটাকে খানিক চাঙ্গা করে নেওয়ার জন্য এক সময় বিশ্রাম নিচ্ছিল যুবক। ভীষণ পিপাসা ও ক্ষুধা নিবারণের উদ্দেশ্যে সঙ্গে নিয়ে আসা সামান্য খাদ্য ও পানি বিশ্রামের শুরুতেই গলার নিচে পাঠিয়ে দিয়েছে সে। এবার উটটাকে খেজুর বাগানে ছেড়ে দিয়ে একটি গাছের ছায়ায় মনের সুখে ঘুমিয়ে পড়েছে।
আরব দেশে প্রচুর খেজুর বাগান রয়েছে। ছোট বড় মাঝারি সব ধরনের বাগানই আছে সেখানে। যে বাগানটিতে যুবক বিশ্রাম নিচ্ছিল সেটি খুব বেশি একটা বড় ছিল না। একজন মালি বাগানটি দেখাশুনা করত । পানি দিত। আগাছা পরিস্কার করত। ভাল ফলনের জন্য যা কিছু করা দরকার সবই করত সে।
সেদিন মালি বাগানে কাজ করছিল। হঠাৎ তার নজরে পড়ল, একটি উট এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। উটের পায়ে পিষ্ঠ হয়ে কিছু চারা গাছ ইতোমধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থা দেখে মালি রেগে যায় । সঙ্গে সঙ্গে উটটিকে তাড়ানোর উদ্দেশ্যে উহার প্রতি একটি পাথর নিক্ষেপ করে। উটটিকে মেরে ফেলার কোন ইচ্ছা মালির ছিল না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ তার নিক্ষেপিত পাথরটি উটটির ঠিক বুক বরাবর প্রচন্ড বেগে আঘাত হানে। এতে ছটফট করতে করতে তৎক্ষণাৎ উটটি মারা যায় ।
মালি ভয়ে কাঁপতে থাকে । এক অজানা আশংকায় তার বুক দুরু দুরু করে । চেহারায় ফুটে উঠে উৎকণ্ঠার ভাব। একটু দূরে হঠাৎ এক যুবককে দেখতে পেয়ে ভাবে, উটের মালিক হয়তো সেই হবে। মালি দেরি করে না। সে ছুটে যায় বেদুঈন যুবকের নিকট। খুলে বলে সবকিছু। তারপর বিনীত কণ্ঠে ক্ষমা প্রার্থনা করে যুবকের নিকট ।
যুবক উটটিকে সীমাহীন ভালবাসত। সেটি ছিল তার সবচাইতে প্ৰিয় উট। তদুপরি এ মুহূর্তে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে এটি। তাই উটের মৃত্যুর কথা শুনে যুবক দিশেহারা হয়ে পড়ল। হারিয়ে ফেলল হিতাহিত জ্ঞান। ক্রোধে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে মালির দাড়ি ধরে সজোরে ঝাকুনি দিতে লাগল। এ সময় মালি ছিল বেশ অসুস্থ। তাই যুবকের ঝাকুনি সহ্য করতে না পেরে সেও এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল ।
এবার যুবক কিংকর্তব্যবিমুঢ়। কি করল, কি করা তার উচিত কিছুই বুঝতে পারল না। কিছুক্ষণ পর হুঁশ ফিরে এলে সেও কেঁদে ফেলল । অস্ফুট স্বরে বলতে লাগল, একি করলাম আমি! অন্যায়ভাবে আমি একজন মানুষকে হত্যা করলাম!
এতক্ষণে মালির ছেলেরা বাগানে এসে উপস্থিত। তারা যুবকের মুখ থেকে সবকিছু শুনল । তারপর বিচারের জন্য তাকে নিয়ে গেল খলীফার দরবারে। খলীফা উভয় পক্ষের বক্তব্য শ্রবণ করলেন। যুবক তার বক্তব্য প্রদানে বিন্দুমাত্রও মিথ্যার আশ্রয় নিল না। সে অকপটে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করল ।
বাদী বিবাদীর কথা শুনে খলীফা কিছুক্ষণ ভেবে নিলেন। যুবকের সত্যবাদিতায় তিনি মুগ্ধ হলেন। কিন্তু হত্যার পরিবর্তে হত্যা- ইসলামের এই বিধানের কারণে যুবককে কতল করার নির্দেশ দিলেন ।
যুবক বলল, খলীফার নির্দেশ শিরোধার্য। তার ফায়সালা অবশ্যই কার্যকর হবে । তবে আমার একটি আবেদন ছিল ।
: বল তোমার কী আবেদন? খলীফা গম্ভীর কন্ঠে বললেন ।
: আমীরুল মুমেনীন! হুকুম তামীলের পূর্বে পরিবার পরিজনকে একনজর দেখতে চাই। চির বিদায় আনতে চাই তাদের কাছ থেকে। এটিই আমার জীবনের শেষ ইচ্ছা ।
: তোমার এ আবেদন পূর্ণ হতে পারে । তবে এজন্য প্রয়োজন একজন জামিনদারের । তুমি না এলে তোমার পরিবর্তে তাকেই কতল করা হবে ।
খলীফার দরবার লোকে লোকারণ্য। চতুর্দিকে কেবল মানুষ আর মানুষ । যুবককে চিনে এমন কেউ
Alert message goes here